সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মে, ২০২১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

“বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নে” -এর সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর।

 সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন : শিয়াল তার পুরনো গর্তে যায় না কেন?  উত্তর : শিয়াল নরহরি দাস-এর ভয়ে পুরনো গড়তে আর ফিরে যায়নি।  প্রশ্ন : শিয়াল ভাবে, বাঘ মামা দাড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি। – শিয়াল বাঘকে কিভাবে জব্দ করেছিল? উত্তর : শিয়ালের গর্তের কাছে একটি কুয়ো ছিল। নদীর ধার থেকে একটি মাদুর টেনে নিয়ে ওর মুখের উপর তাকে বেশ করে বিছিয়ে বাঘকে বললো মাদুরের উপর বসতে তাকে সে জলখাবার খেতে দেবে। দেখ না বাঘ লাফিয়ে মাদুরের উপর বসতে গেল সঙ্গে সঙ্গে সে কুয়োর ভেতর পড়ে গেল। তখন শিয়াল মামাকে বলে 'মামা খুব করে জল খাও, একটুও রেখো না যেন।' এইভাবে শিয়াল বাঘকে জব্দ করেছিল। প্রশ্ন : তাই বাঘ তাতে ডুবে মারা যায়নি—বাঘ কোথায় ডুবে গিয়েছিল? সে মারা যায়নি কেন? উত্তর : শিয়ালের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে একটি কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। কুয়োর ভিতরে বেশি জল ছিল না তাই বাঘ ডুবে মারা যায়নি।  প্রশ্ন : বেচারি না খেয়ে না খেয়ে শেষে আধমরা হয়ে গেল।—কার কেন এরূপ অবস্থা হয়? উত্তর ঃ শিয়াল বাঘের হাত থেকে বাঁচতে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে লাগল। ঠিকমতো সে খেতে পেল না। শেষে সে আধমরা হয়ে গেল। প্রশ্ন : ...

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর “টুনটুনির বই” -এর ‘নরহরি দাস’ গল্পে বাঘ ও শিয়ালের কিরুপ পরিণতি হয়েছিল বিষয়বস্তু অবলম্বনে লেখ।

 • রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর উত্তর ঃ নরহরি দাস গল্পে আমরা দেখি যে একটি ছোট্ট ছাগলছানা গর্তের ভিতরে থাকতো সে বাইরে বের হতে পারত না। যখন সে একটু বড় হল তখন সে গর্তের বাইরে বেরোলো। তার সঙ্গে দেখা হলো এক মস্ত ষাঁড়-এর। ষাঁড়টিকে দেখে সে মনে করল ওটা একটা বড় ছাগল খুব ভালো জিনিস খেয়ে সে বড় হয়েছে। সে যাঁড়-এর কাছে গিৱে জিজ্ঞেস করল ষাঁড় কি খায়?— ষাঁড় উত্তরে জানায় সে ঘাস খায়। ছাগল বলে তার মাঙ ঘাস খায় কিন্তু তার মত এত বড় নয় কেন। তখন ষাঁড় বলল তার মায়ের থেকে সে অনেক বেশি ঘাস খায়।        ছাগলছানা তখন জানতে চায় সেই ঘাস কোথায় পাওয়া যায়। ষাঁড় তখন দেখায় বনের ভিতর ঘাস পাওয়া যায়। সেই বনের ভিতরে ষাঁড় ছাগল ছানা কে নিয়ে গেল। সেই বনের ভিতরে খুব চমৎকার ঘাস ছিল। ছাগলছানার পেটে যত ঘাস ধরল সে তত ঘাস খেলো। ঘাস খেয়ে তার পেট এমন ভারী হয়ে গেল সে আর চলতে পারল না। তখন সে বনের মধ্যে একটি গর্ত দেখতে পেয়ে তার ভেতর ঢুকে পড়লো। সেই গর্তে এক শিয়াল বসবাস করত সে তখন বাঘ মামার বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিল। সে কিরে এসে দেখল গর্তের ভিতর কিরকম একটা জতু ঢুকে রয়েছে। অন্ধকারের ভেতর ভ...

‘টুনটুনির বই’-এর “নরহরি দাস” গল্প অবলম্বনে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ।

প্রশ্ন : গল্পের ছাগল ছানা কোথায় থাকতো? উত্তর : মাঠের পাশে বন আছে, বনের ধারে মস্ত পাহাড়, সেইখানে একটা গর্তের ভিতর একটি ছাগল ছানা থাকত। প্রশ্ন : ছাগলছানাটি গর্তের বাইরে যেতে পারত না কেন? উত্তর ঃ ছাগল ছাড়াতে খুব ছোট ছিল তাই সে গর্তের বাইরে বের হতে পারত না।  প্রশ্ন ঃ ছাগলছানাটি গর্তের বাইরে বের হতে চাইলে তার মা কি বলতো? উত্তর : ছাগলছানাটি গর্তের বাইরে বেরোতে চাইলে তার মা বলতো বাইরে গেলে ভালুক ধরবে বাঘে নিয়ে যাবে কিংবা সিংহ খেয়ে ফেলবে।  প্রশ্ন : তা শুনে তার ভয় হতো আর সে চুপ করে গর্তের ভিতরে বসে থাকতো। –কি শুনে ছাগল ছানা ভয় লাগতো? উত্তর : ছাগলছানাটি গর্তের বাইরে বেরোতে চাইলে তার মা বলতো বাইরে গেলে ভালুক ধরবে বাঘে নিয়ে যাবে কিংবা সিংহ খেয়ে ফেলবে। এই কথা শুনে ছাগলছানাটি ভয় পেত। প্রশ্ন : ছাগল ছানা আর এত বড় জন্তু কখনো দেখেনি। এখানে কার কথা বলা হয়েছে? উত্তর : এখানে একটি ষাঁড় এর কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন : শেষে একদিন একেবারে গর্তের বাইরে চলে এলো। কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে? উত্তর: ছাগলছানা যখন বড় হল তখন তার ভয় কমে গেল তখন তার মা বাইরে চলে গেল সে গর্তের ভিতর উঁকি মেরে দেখত। শেষে...

“টুনটুনি আর রাজার কথা” গল্প অবলম্বনে টুনটুনির আর রাজার কথা গল্পে রাজার পরিণতি কি হয়েছিল আলোচনা করো।

 রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর   প্রশ্নঃ টুনটুনির আর রাজার কথা গল্পে রাজার পরিণতি কি হয়েছিল আলোচনা করো।  অথবা টুনটুনিকে জব্দ করার জন্য রাজামশাই নানাবিধ চেষ্টা করে অবশেষে জব্দ হয়ে গেলেন। বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে তা দেখাও। উত্তরঃ টুনটুনি আর রাজার কথা গল্প দেখা গেছে টুনটুনি রাজার একটি টাকা বাড়িতে নিয়ে আসে। সেটি রাজার সহ্য হয় না। রাজার লোক দিয়ে সেই টাকা নিয়ে আসে। তখন টুনটুনি বলে—রাজা বড় ধনে কাতর/ টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর। এই কথা শোনার পর রাজা একটু নরম হন। রাজার লোক গিয়ে টাকাটা টুনটুনিকে ফেরত দেয়। টাকা ফিরে পেয়ে আনন্দে বলে ওঠে রাজা ভারি ভয় পেল। টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল। এই কথা শুনে রাজা বেজায় রেগে ওঠেন। রাজা তার লোককে নির্দেশ দেন টুনটুনিকে ধরে আনতে সে টুনটুনি ভাজা খাবে। রাজার লোক টুনটুনিকে ধরে নিয়ে এসে রাজার কাছে তুলে দেয়। রাজা টুনটুনিকে মুঠোয় করে নিয়ে বাড়ির ভিতর রানীদের বলে পাখিটাকে ভেজে তাকে খেতে দিতে। সাতজন রানী মিলে সেই পাখিটাকে দেখতে থাকে। এইভাবে একজন আরেকজনকে হাতে দিতে গিয়ে পাখিটা পালিয়ে যায়। তখন রাজার ভয়ে রানীরা রাজাকে একটি ব্যাঙ ভেজে খেতে দেয়। রাজা ব্...

"টুনটুনি আর রাজার কথা" গল্প অবলম্বনে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

 টুনটুনি আর রাজার কথা • সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন : টুনটুনির বাসা কোথায় ছিল?  উত্তর : রাজার বাগানের কোণে। প্রশ্ন : রাজা কিসের টাকা রোদে শুকোতে দিয়েছিল?  উত্তর : রাজা সিন্দুকের টাকা রোদে শুকোতে দিয়েছিল। প্রশ্ন : টুনটুনি রাজা টাকা পেয়ে কি বলতে লাগলো?  উত্তর ঃ রাজার ঘরে যে ধন আছে, আমার ঘরে সে ধন আছে। এই কথা বলতে লাগলো। প্রশ্ন : সকলে হাতজোড় করে বললে–সকলে হাতজোড় করে কি বলল?  উত্তর : সকলেই হাতজোড় করে রাজামশাইকে বলল টুনটুনি পাখি বলছে রাজার ঘরে ধন আছে ওর ঘরেও নাকি সেই ধন আছে। প্রশ্ন : শুনে রাজা খিলখিল করে হেসে বললেন—কি বললেন ?  উত্তর : রাজা বললেন টুনটুনির বাসায় কি আছে দেখে আসতে।  প্রশ্ন : টুনটুনির বাসায় কি ছিল? উত্তর : টুনটুনির বাসা ছিল রাজার একটি টাকা। প্রশ্ন : টুনটুনির বাসা থেকে রাজার লোক টাকাটি নিয়ে আসার পর টুনটুনি কি বলে?  উত্তর: টুনটুনির বাসা থেকে রাজার লোক টাকাটি নিয়ে আসার পর টুনটুনি দুঃখে বলতে লাগলো রাঙ্গ বড় ধনে কাতর। টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর। প্রশ্ন : টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার পর টুনটুনি আনন্দে কি বলে ওঠে? উত্তর : টুনটুনি আনন্দে বলে ওঠে...

"টুনটুনি আর বিড়ালের কথা" গল্প থেকে আমরা যা জানতে পারি, তা গল্প অবলম্বনে সকল সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর।।

 টুনটুনির বই – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী   টুনটুনির আর বিড়ালের কথা © সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন : টুনটুনি কোথায় কিভাবে বাসা বেধেছে?  উত্তর : টুনটুনি গৃহস্থের বেগুন গাছের পাতা ছোঁট দিয়েসেলাই করে বাসা বেধেছে। প্রশ্ন : টুনটুনির কটি ছানা ছিল? তারা কি করত?  উত্তর : টুনটুনির তিনটি ছোট্ট ছোট্ট ছানা ছিল।তারা উড়তে পারত না, চোখ মেলতে পারত না। খালি হা করে চি চি করত। প্রশ্ন : সে খালি ভাবে টুনটুনির ছানা খাব। এখানে কার কথা বলা হয়েছে?  উত্তরঃ এখানে গৃহস্থের বিড়ালের কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন : টুনটুনি তার ছানাদের কি করতে বলে? উত্তর : টুনটুনি তার ছানাদের বলে উড়ে অন্য গাছের ডালে বসতে।  প্রশ্ন : তখন টুনটুনি পা উচিয়ে তাকে লাথি দেখিয়ে বললে–কে কাকে লাথি দেখিয়ে বলল? উত্তর : টুনটুনি পাখি বিড়ালকে লাথি দেখিয়ে বলল দূর হ লক্ষী ছাড়া বিড়ালনী।  প্রশ্ন : দুষ্টু বিড়ালের পরিণাম কি হয়েছিল? উত্তর : দুষ্টু বিড়াল টুনটুনির ছানাগুলোকে খাবার জন্য বেগুন গাছে টুনটুনির বাসায়লাফ মারে। কিন্তু ছানাগুলো তখন উড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে। বিড়াল শুধু বেগুন কাটার খোঁচা খেয়ে নাকাল হ...

ধর্মমঙ্গল কাব্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরো।

 ★ধর্মমঙ্গল কাব্যের ঐতিহাসিকতা :– ধর্মমঙ্গলের কাহিনির পেছনে যে ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু রয়েছে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাল বংশের সমাপ্তি পর্বকে এই কাহিনির পটভূমি হিসাবে মনে করা হয়। এই কাহিনির ইছাই ঘোষ, লাউসেন ঐতিহাসিক ব্যক্তি। এই কাব্যে যুদ্ধ-বিগ্রহজনিত উত্তেজনামূলক ঘটনা প্রাচুর্যময় বাংলার ঘটনাকেই সূচিত করে। ধর্মঠাকুরের উৎসব কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের উৎসব। অন্যান্য মঙ্গলকাব্যে সাধারণ বাঙালির যে মেরুদণ্ডহীন নমনীয়তা দেবতার অভিপ্রায়ের কাছে সমর্পিত হয়েছে, তার বিপরীত রূপটিই এখানে প্রকাশিত। ধর্মমঙ্গলে রাঢ়ের রাজনৈতিক জীবনযাত্রা ও তার নিম্নশ্রেণির নর-নারীর মহিমান্বিত দেশাত্মবোধের যে উজ্জ্বল রসসমৃদ্ধ চিত্র আমরা পাই তাতে একে রাঢ়ের জাতীয় কাব্য রূপে অভিহিত করা যায়।

ধর্মমঙ্গল কাব্য কে কেন রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য বলে অভিহিত করা হয় ??

ধর্মমঙ্গল বিষয়বস্তুর প্রাচীনত্বে ও বিভিন্ন ধর্মমতের সমন্বয় প্রয়াসের প্রত্যক্ষ নিদর্শন রূপে ধর্মমঙ্গল কাব্যই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মধ্যযুগীয় দৈব নির্ভরতাবাদী মঙ্গলকাব্য ধারায় ধর্মমঙ্গলের স্থান কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এই স্বাতন্ত্র্য্য মূলত ধর্মঠাকুরের স্বরূপে, ভৌগোলিক অবস্থানে এবং বিষয়বস্তুর বর্ণনা ভঙ্গিমায়। তাই এই কাব্য নিয়ে নানা দাবী উপস্থাপিত হয়েছে। এমনও দাবী করা হয়েছে যে ধর্মমঙ্গল রাঢ়ের জাতীয় কাব্য। ★ধর্মমঙ্গল কাব্যের ঐতিহাসিকতা :– ধর্মমঙ্গলের কাহিনির পেছনে যে ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু রয়েছে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাল বংশের সমাপ্তি পর্বকে এই কাহিনির পটভূমি হিসাবে মনে করা হয়। এই কাহিনির ইছাই ঘোষ, লাউসেন ঐতিহাসিক ব্যক্তি। এই কাব্যে যুদ্ধ-বিগ্রহজনিত উত্তেজনামূলক ঘটনা প্রাচুর্যময় বাংলার ঘটনাকেই সূচিত করে। ধর্মঠাকুরের উৎসব কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের উৎসব। অন্যান্য মঙ্গলকাব্যে সাধারণ বাঙালির যে মেরুদণ্ডহীন নমনীয়তা দেবতার অভিপ্রায়ের কাছে সমর্পিত হয়েছে, তার বিপরীত রূপটিই এখানে প্রকাশিত। ধর্মমঙ্গলে রাঢ়ের রাজনৈতিক জীবনযাত্রা ও তার নিম্নশ্রেণির নর-নারীর মহিমান্বিত দেশাত্মবোধের যে...

ধর্মমঙ্গল কাব্যের অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ কবি ও তাঁর কৃতিত্বের পরিচয় দাও।।।।

         ■ অষ্টাদশ শতাব্দী – শ্রেষ্ঠ কবি                    • ঘনরাম চক্রবর্তী ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি হলেন ঘনরাম চক্রবর্তী। ঘনরাম অষ্টাদশ শতাব্দীর শক্তিমান কবি। মঙ্গলকাব্যের ঐশ্বর্যযুগের শেষ পর্যায়ে রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়ন, ঘনরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল এবং ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল নির্বাণোন্মুখ দীপশিখার মতো সর্বশেষ জ্যোতি।  সুকুমার সেন লিখেছেন,– “ধর্মমঙ্গল রচয়িতাদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত ও দক্ষ ছিলেন ঘনরাম চক্রবর্তী। ঘনরাম সুলেখক ছিলেন। তাঁহার রচনা সর্বাধিক পরিচিত ধর্মমঙ্গল কাব্য”। ( বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫১ )।  অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও লিখেছেন, –“আধুনিক যুগের বাঙালী সমাজ তাঁহার কাব্য হইতেই ধর্মমঙ্গল কাব্যের নূতনত্ব উপলব্ধি করিয়াছিলেন। এই শাখার অন্যান্য শক্তিশালী কবি অপেক্ষা ঘনরাম অধিকতর ভাগ্যবান। কারণ ধর্মমঙ্গলের কবিদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম মার্জিত রুচির নাগরিক সমাজে পরিচিত হন। ( বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, তৃতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় পর্ব, পৃষ্ঠা-৯৮ ...

বাংলা সাহিত্যের আদিপর্বে বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা এবং বিবর্তনের ইতিহাস। সমস্ত সংক্ষিপ্ত ও অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ....

সংক্ষিপ্ত ও অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ....                                                  প্রতিটি প্রশ্নের মান ১/২ 1. ভারতবর্ষের প্রথম সাহিত্যিক ভাষারূপে কোন ভাষার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে? উত্তর : আনুমানিক খ্রিঃ পূর্বঃ ৬০০-২০০ খ্রিঃ মধ্যে প্রচলিত 'পালি' ভাষাকে লোক ভারতের প্রথম সাহিত্যিক ভাষা হিসাবে মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে। 2. পালি ভাষার উৎপত্তি কীভাবে ঘটে? উত্তর : বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র সংগ্রন্থনের মৌলিক প্রয়োজন থেকেই পালি ভাষার প্রথম উৎপত্তি ঘটেছে বলে সাহিত্য ঐতিহাসিকরা মনে করেছেন। 3. কোন্‌ সময়কালে সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে নানা শাস্ত্র ও কাব্যগ্রন্থ রচনার কথা জানা যায়? উত্তর : পাল রাজাদের আমলে সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন শাস্ত্র এবং কাব্যগ্রন্থ রচনার সুনিশ্চিত প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এইসব রচনার প্রত্যক্ষ নিদর্শন অপ্রাপ্য থাকায় সাহিত্য ঐতিহাসিকরা তিব্বতি ভাষার অনুবাদ গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে থাকেন।  4. বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃত সাহিত্য র...

ধর্মমঙ্গল কাব্যে ধর্মদেবতার উদ্ভব সম্পর্কে আলোচনা করো। |

বিষয়বস্তুর প্রাচীনত্বে ও বিভিন্ন ধর্মমতের সমন্বয় প্রয়াসের প্রত্যক্ষ নিদর্শন রূপে ধর্মমঙ্গল কাব্যই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মধ্যযুগীয় দৈব নির্ভরতাবাদী মঙ্গলকাব্য ধারায় ধর্মমঙ্গলের স্থান কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এই স্বাতন্ত্র্য্য মূলত ধর্মঠাকুরের স্বরূপে, ভৌগোলিক অবস্থানে এবং বিষয়বস্তুর বর্ণনা ভঙ্গিমায়। তাই এই কাব্য নিয়ে নানা দাবী উপস্থাপিত হয়েছে। এমনও দাবী করা হয়েছে যে ধর্মমঙ্গল রাঢ়ের জাতীয় কাব্য। ★ ধর্মদেবতার স্বরূপ/উদ্ভব :- পশ্চিম ও দক্ষিণ বাংলার অনেক গ্রামে এখনও ধর্মের থান, মন্দির ও আস্তানা আছে। বহু মন্দিরে ধর্মের কোনো মূর্তি নেই। তার শিলামূর্তি বেদির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মূর্তি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। সে যাই হোক, ধর্মঠাকুরের উদ্ভবের পেছনে লৌকিক ও পৌরাণিক সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটেছে। যেমন— 1. হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে ধর্মঠাকুর প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ দেবতা। 2. ক্ষিতীশ প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের মতে—ধর্মঠাকুর বৌদ্ধ দেবতা নয়, তিনি বৈদিক সূর্য দেবতা। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের সূক্তের সঙ্গে ধর্মমঙ্গলের সৃষ্টিতত্ত্বের গভীর সাদৃশ্য আছে। 3. সুকুমার সেনের মতে, ধর্মঠাকুর একটি মিশ্র দেবতা। বৈদিক ধর্মাচার, ...

ধর্মমঙ্গল কাব্যের বৈশিষ্ট্য(সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য) আলোচনা কর।

  ★ ধর্মমঙ্গল কাব্যের বৈশিষ্ট্যঃ–  মঙ্গলকাব্য ধারায় ধর্মমঙ্গলের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করার মতো। * সাদৃশ্য– ১. মঙ্গলকাব্য সমূহের ধারা অনুসারে এই কাব্যের নামকরণ ধর্মমঙ্গল এবং এই কাব্যে দেবতার মাহাত্ম্য প্রচারই মঙ্গলকাব্যের স্বরূপকে ফুটিয়ে তোলে।  ২. অন্যান্য মঙ্গলকাব্যের মতো অলৌকিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে নায়ক চরিত্রের দৃঢ়তার প্রকাশ এখানে বর্তমান। ৩. রচনাংশে কবির আত্মপরিচয়জ্ঞাপক পদ এবং সমাপ্তিতে দেবদেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের পর নায়ক-নায়িকার স্বর্গারোহণ মঙ্গলকাব্যের ধারার মতো এখানেও অনুসৃত হয়েছে। ৪. বিভিন্ন লৌকিক বর্ণনা, সমাজ মানসিকতার পরিচয়, রাজানুগ্রহ, স্বপ্নাদেশ, পালাবদ্ধ গীত রচনা প্রভৃতি দিক থেকে মঙ্গলকাব্যের ধারার সঙ্গে এই কাব্যের নিগূঢ় যোগ রয়েছে। * বৈসাদৃশ্য– ১. ধর্মঠাকুর হল পুরুষ দেবতা। কিন্তু চণ্ডীমঙ্গল ও মনসামঙ্গলে স্ত্রী দেবতা। ২. চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল বৃহৎ বঙ্গে প্রচলিত থাকলেও ধর্মমঙ্গল শুধুমাত্র রাঢ় অঞ্চলের কাব্য। ৩. আর কোনো দেবতার পূজায় জাতিভেদ বিড়ম্বিত হিন্দু সমাজ এত ভেদবুদ্ধিহীন সর্বজনীন ভক্তির আশ্রয়ে ঐক্যের স্ফূরণ অনুভব করেনি। আর কোন দেবতার পূজায...

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনী সংক্ষেপ আলোচনা করো।

  ★ধর্মমঙ্গলের কাহিনি:– ধর্মমঙ্গল কাব্যের দুটি কাহিনি—হরিশ্চন্দ্র ও লাউসেনের কাহিনি।   ১. হরিশ্চন্দ্রের কাহিনি:– রাজা হরিশ্চন্দ্র ও তার রানি মদনা নিঃসন্তান হওয়ায় সমাজে লোকনিন্দার ভয়ে মনের দুঃখে ঘুরতে ঘুরতে বল্লুকা নদীর তীরে উপস্থিত হয়ে দেখেন সেখানে ধর্মঠাকুরের ভক্তেরা ঘটা করে দেবতার পূজা করছেন। রাজা ও রানি তাদের কাছে ধর্মঠাকুরের। মাহাত্ম্য শুনে ধর্মঠাকুরের পূজার্চনা করে শর্তসাপেক্ষে বর লাভ করেন। শর্ত হল এই তাদের পুত্রকে ধর্মঠাকুরের কাছে বলি দিতে হবে। যথাসময়ে মদনার পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। রাজা ও রানি পুত্রকে পেয়ে ধর্মঠাকুরের কাছে বলি দেওয়ার পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভুলে যান। ধর্মঠাকুর ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে একদিন হরিশ্চন্দ্রের কাছে উপস্থিত হন। সেদিন ছিল। একাদশীর পারণ; ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণ রাজপুত্র লুইধরের মাংস আহার করতে চাইলে রাজা ও রানি পুত্রকে বধ করে তার মাংস রান্না করলেন। রাজা ও রানির এই আনুগত্য ও নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট হয়ে ধর্মঠাকুর লুইধরকে জীবিত করে পুনরায় রাজা-রানির কাছে ফিরিয়ে দেন। এরপর রাজা ও রানির প্রচেষ্টায় ধর্মঠাকুরের পূজা মহাসমারোহে আয়োজিত হতে থাকে। ২. লাউসেনের কাহিনি:...

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক চরিত্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞান কে কি বিজ্ঞান বলা যায় যুক্তি সহ আলোচনা।

  উওর :- বিজ্ঞান বলতে বিশেষ এক ধরনের জ্ঞানকে বোঝায়। এই জ্ঞান অর্জনের নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যেমন, প্রমাণ সাপেক্ষে বক্তব্য রাখা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্তকে যাচাই করা গ্রহণ করা বা বর্জন করা। প্রাণীবিদ্যা, রসায়ন, অর্থনীতি এইসব বিষয়ের বৈজ্ঞানিক চরিত্র তাদের সুসংগঠিত জ্ঞান প্রকাশের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। এইভাবে দেখলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে অনেক আলোচনা আছে যেখানে বিজ্ঞানের চিরাচরিত পন্থা অবলম্বন করে বিষয়-বিশ্লেষণ ও জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করা হয়। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় নির্বাচনের সময় ভোটদানের প্রকৃতি কী হবে (কে কাকে ভোট দেবে), প্রতিযোগী দলগুলির ভোটের হার কেমন হতে পারে, এই নিয়ে পরিসংখ্যানভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে বিশ্লেষণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা প্রায়ই করে থাকেন। জনমত নিয়েও বৈজ্ঞানিক আলোচনা করা হয়। যেমন, জনগণ সরকারের একটি নীতিকে সমর্থন করে কি করে না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ পদ্ধতি বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। তার দু-একটি কারণ বলা যেতে পারে। যেমন, প্রথমত, পরীক্ষাগারে একজন রসায়নশাস্ত্রের বিজ্ঞানী যে ধরনের পরীক্ষা-নি...

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু।

উওর :- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় একদিকে আছে বস্তুগুত বিষয় যেমন, নির্বাচন কেমন করে হ রাজনৈতিক দল আছে ইত্যাদি। আর একদিকে আছে নীতি বা মূল্যবোধের আলোচনা। কোনো দল ক্ষমত করা হয়। এতে কি দেশের ভালো হবে? সরকারি নীতি—তা যে বিষয়ে হোক না কেন—অনেক সময় ব তার ভাল-মন্দ চুলচেরা বিচার করার চেষ্টা করা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু স্বভাবতই খুব ব্যাপক।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় নিম্মোক্ত বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ এক :- কিছু ধ্যান-ধারণা যেমন ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, অধিকার ইত্যাদি।।  দুই:- কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন, আইনসভা, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিচারবিভাগ ইত্যাদি। তিন:- কিছু প্রক্রিয়া যেমন, রাজনৈতিক দল বা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর কেন্দ্রে আছে রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং এই ব্যবস্থাকে ঘিরে আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়া। রাজনীতির আলোচনা বা সরকারি কাজকর্মের কথাবার্তা ছাড়াও অনেক বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাকে বলে ?

★  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাকে বলে ?  উওর :- বিভিন্ন বাষ্ট্রবিঙৃগানি গণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংঙ্গা দিয়েছেন। তাই রাষ্ট্রবিঙ্গানের সংঙ্গা নিয়ে  মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। যাইহোক রাষ্ট্রবিঙ্গানের সংঙ্গা প্রসঙ্গে লেখা যায় রাষ্ট্রবিঙগান হল   সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা রাষ্ট্রবিজ্ঞান, যার কাজ রাষ্ট্র ও রাজনীতির বিজ্ঞা সমাজজীবনের বিভিন্ন দিক আছে যেমন, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, অর্থনৈতিক আদানপ্রদান ই এক ধরনের সামাজিক ব্যবহার; রাষ্ট্রবিজ্ঞান তারই যুক্তিনিষ্ঠ ও বৈজ্ঞানিক আলোচনা। এক কথায় যে গ্রন্থে রাষ্ট ও রাজনীতি সম্পর্কে বিঙ্গাান সম্মত যুুুক্তিনিষ্ট আলোচনা হয় তাকে রাষ্ট্রবিঙ্গান বলে। 

সীতারাম দাস– সপ্তাদশ শতাব্দীর বা উত্তর-চৈতন্য যুগ-এর ধর্মমঙ্গল কাব্যের কবি – সংক্ষিপ্ত পরিচয় ।।

  সীতারাম দাস :-           ১০০৪ মল্লাব্দ অর্থাৎ ১৬৯৮-৯৯ খ্রীঃ অব্দে সীতারাম দাস ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। তাঁর অষ্টাদশ শতকের অনেকগুলি খণ্ডিত পুঁথি পাওয়া গেছে। তাতে কবির আত্মকাহিনীটুকু কিঞ্চিৎ বৈচিত্র্যমণ্ডিত হয়েছে। বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস গ্রামে মাতুলালয়ে কবির জন্ম—এই গ্রামে ধর্মঠাকুরের মন্দির আজও প্রসিদ্ধ। সুখসাগর গ্রামে তার নিজবাড়ি, পিতার নাম দেবীদাস, মাতার নাম কেশবতী। কবি প্রথমে ডোমের ঠাকুর ধর্মের পূজা করতে ও নাম প্রচার করতে কিছু সংকুচিত হয়েছিলেন। কারণ তখন উচ্চবর্ণের সমাজে ধর্মের ততটা প্রচার ছিল না। কিন্তু স্বপ্নে ধর্মের প্রত্যাদেশ পেয়ে কবি সাহস করে ধর্মের মহিমাবিষয়ক কাব্য লিখলেন। এই কাব্যটি সমাপ্ত করতে কবির মোট চল্লিশ দিন লেগেছিল। কবির আত্মকাহিনীটি বেশ বাস্তব বলে মনে হয়। কাব্যারম্ভে কবি মাঝে মাঝে ময়ূরভট্টের নাম করেছেন। তার মতে ময়ূরভট্ট প্রকৃতই ধর্মমঙ্গল লিখেছিলেন, কিন্তু কালক্রমে সেই কাব্যের কিছু কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা কবির এ মন্তব্য প্রমাণাভাবে মেনে নিতে অপারগ। বোধ হয় তিনি জনশ্রুতিতে ময়ূরভট্টের নাম শুনেছিলেন, তাই রচনার মধ্য...

কবি রামদাস আদক– সপ্তাদশ শতাব্দীর বা উত্তর-চৈতন্য যুগ-এর ধর্মমঙ্গল কাব্যের কবি - সংক্ষিপ্ত পরিচয় ।।

 => রামদাস আদক :-   সপ্তদশ শতাব্দীতে আবির্ভূত এই কবি গতানুগতিক পথে যৎকিঞ্চিৎ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। অধ্যাপক বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রায় তেত্রিশ বৎসর পূর্বে রামদাসের *‘অনাদিমঙ্গল’* সম্পাদনা করেছিলেন। অবশ্য বসন্তকুমার রামদাস আদকের বংশধরদের মুখ থেকে শুনে কাব্যের অধিকাংশ লিখে নিয়েছিলেন। তাঁর সম্পাদিত কাব্যের মূল কিন্তু কোনো পুঁথি নয়, লোকের মুখ থেকে শোনা পয়ার-ত্রিপদী। অবশ্য তিনি একখানি খাতাও উপাদান হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। আধুনিক যুগের ধর্মের গায়কেরা ঐ খাতা থেকে গান গাইতেন। কাজেই রামদাস আদকের মুদ্রিত 'অনাদিমঙ্গল’ সর্বাংশে প্রাচীন কি না সে বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ হয়। কাব্যের প্রারম্ভে ধর্মমঙ্গল কাব্যের প্রথামতো কবি আত্মকথা বর্ণনা করেছেন বেশ ফলাও করে। আরামবাগের নিকটে এক গ্রামে চাষী-কৈবর্ত বংশে কবির জন্ম হয়। জমিদারের দ্বারা উৎপীড়িত হয়ে তিনি যখন মাতুলালয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন পথিমধ্যে বিপন্ন কবির কাছে ধর্মঠাকুর আবির্ভূত হয়ে বললেন যে, তিনি হচ্ছেন ঝাড়গ্রামের ধর্মঠাকুর কালুরায়। কবিকে তিনি ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করতে আদেশ করলেন। কিন্তু কৰি যে মুর্খ।  তখন শঙ্খচক্রগদাপদ...

শ্যামপন্ডিত –সপ্তাদশ শতাব্দীর বা উত্তর-চৈতন্য যুগ-এর ধর্মমঙ্গল কাব্যের কবি – সংক্ষিপ্ত পরিচয় ।।

  শ্যামপণ্ডিত :-    ইনি ভণিতায় শ্রীশ্যামপণ্ডিত বলে নিজেকে উল্লেখ করেছেন। তার কাব্য 'নিরঞ্জনমঙ্গল' নামে অধিকতর পরিচিত। 'পণ্ডিত' উপাধি দেখে মনে হয়, কবি ডোমের ব্রাহ্মণ ছিলেন। কাব্যের মধ্যে দু-চারটি এমন স্থানীয় ব্যাপারের উল্লেখ আছে যে, এঁকে বীরভূমের অধিবাসী বলে মনে হয়। একখানি পুঁথিতে ১৬২৫ শকাব্দের উল্লেখ আছে বলে কেউ কেউ মনে করেন, ১৭০৩-১৭০৪ খ্রীঃ অব্দে কাব্যটি সমাপ্ত হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে নিশ্চয় করে কিছু বলা যায় না। ভাষা দেখে তাকে বেশি পুরাতন বলে মনে হয় না। এখনও বর্ধমান অঞ্চলে ধর্মের গাজনের সময় তাঁর কাব্য পড়া হয়। তার পুঁথিগুলি খুব বিশুদ্ধ নয়, কারণ তাতে অন্য কবির ভণিতাও আছে। কবির কাব্যটি বিশেষ কোনো দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য নয়। ভাষা, কাহিনী প্রভৃতি একেবারে 'জলবত্তরলং’ ধরনের। সুতরাং এখানে এই ধরনের সাহিত্যগুণবর্জিত পুঁথি সম্বন্ধে বেশি আলোচনা করার প্রয়োজন নেই।                 ধর্মের ব্রত-পূজা, ধর্ম-সেবক সম্প্রদায়, ধর্মপুরাণ ও ধর্মমঙ্গলের কাহিনী এবং কবি-পরিচয় ইত্যাদি আলোচনা করে দেখা গেল, প্রাগার্য যুগ থেকে এ দেশে এই ধরনের শিলামূর্ত...

কবি যদুনাথ (যাদবনাথ) –সপ্তাদশ শতাব্দীর বা উত্তর-চৈতন্য যুগ-এর ধর্মমঙ্গল কাব্যের কবি –সংক্ষিপ্ত পরিচয় ।।

  যদুনাথ (যাদবনাথ) :– কিছুকাল পূর্বে বিশ্বভারতী থেকে ড. পঞ্চানন মণ্ডলের সম্পাদনায় আর একখানি নতুন ধর্মমঙ্গল কাব্য প্রকাশিত হয়েছে। কবির নাম যদুনাথ বা যাদবনাথ। মনে হয় ইনি হাওড়া জেলার লোক, কারণ পুঁথিটি হাওড়া জেলার একটি গ্রাম থেকে পাওয়া গেছে। সৌভাগ্যের বিষয় পুঁথিটি অখণ্ডিত ও সম্পূর্ণ।          কাব্যের মধ্যে কবি নিজের সম্বন্ধে যে যৎসামান্য ইঙ্গিত দিয়েছেন তা থেকে দেখা যাচ্ছে, শোভা সিং নামে এক বিদ্রোহী দুর্দান্ত জমিদার বর্ধমানের মহারাজা কৃষ্ণরামকে নিহত করে তার কন্যার ওপর অত্যাচার করতে গিয়ে সেই রাজকুমারীর ছুরিকাঘাতে ভবলীলা সাঙ্গ করে—এটি ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ঘটনা।  কবি রাজা কৃষ্ণরামের সেই হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করে বলেছেন, “সেইকালে গীত সাঙ্গ হইল আমার।” ১৬৯৬ খ্রীঃ অব্দে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।   সুতরাং দেখা যাচ্ছে যদুনাথ সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ধর্ম মঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। অবশ্য নিজের কাব্যকে কবি সর্বত্র *‘আগমপুরাণ’* বলেছেন।  কবি ধর্মঠাকুরের মহিমা লিখতে বসলেও বৈষ্ণব ও শাক্তমতের প্রতিও শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। খুব সংযত ও মার্জিত ভাষায় রচিত ‘আগমপুরাণে’...

সপ্তাদশ শতাব্দীর বা উত্তর-চৈতন্য যুগ-এর ধর্মমঙ্গল কাব্যের কয়েকজন কবির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সপ্তাদশ শতাব্দীর বা উত্তর-চৈতন্য যুগ-এর ধর্মমঙ্গল কাব্যের কয়েকজন কবির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।। উঃ- ● মানিকরাম গাঙ্গুলি :– ইনি ধর্মমঙ্গলের বিশিষ্ট কবি হলেও এঁর আবির্ভাবকাল, গ্রন্থ রচনার সন তারিখ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে পণ্ডিতদের অনুমান অষ্টাদশ শতাব্দীতে মানিকরাম কাব্য রচনা করেছিলেন। তাঁর কাব্যের নাম 'শ্রীধর্মমঙ্গল' বা 'বার্মাতি। কবি পুরাণ, রামায়ণ ও মহাভারত থেকে কাহিনি সংগ্রহ করেছেন। আদিরসের বাড়াবাড়ি থাকলেও রঞ্জাবতীর মাতৃহৃদয়ের ব্যথা-বেদনা বেশ সহৃদয়তার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে। তাঁর কাব্যের বাস্তবতা প্রশংসনীয়। • রামদাস আদক : – রামদাসের কাব্যের নাম ‘অনাদিমঙ্গল'। ইনি সপ্তদশ শতাব্দীর কবি। তার কাব্যে গ্রথিত আত্মবিবরণী থেকে জানা যায় ভুরসুট পরগনার রাজা প্রতাপনারায়ণের (কবি ভারতচন্দ্রের পূর্বপুরুষ) রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত আরামবাগের কাছাকাছি হায়াপুর গ্রামে কবি রামদাসের জন্ম। কবি জাতিতে কৈবর্ত হলেও পেশায় ছিলেন কৃষিজীবী। ১৫৮৪ শকাব্দে বা ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে কবির কাব্য সমাপ্ত হয়। কবির কবিত্বশক্তি প্রশংসনীয়। কাহিনি বয়নে, চরিত্র সৃষ্টিতে রচনা কৌশলের আধুনিকতায়, পৌরাণিক প্রসঙ্গের বর্ণনা...
Page 1 of 5123...5NextLast