সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

“বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নে” -এর সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর।

 সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন : শিয়াল তার পুরনো গর্তে যায় না কেন?

 উত্তর : শিয়াল নরহরি দাস-এর ভয়ে পুরনো গড়তে আর ফিরে যায়নি। 

প্রশ্ন : শিয়াল ভাবে, বাঘ মামা দাড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি। – শিয়াল বাঘকে কিভাবে জব্দ করেছিল?

উত্তর : শিয়ালের গর্তের কাছে একটি কুয়ো ছিল। নদীর ধার থেকে একটি মাদুর টেনে নিয়ে ওর মুখের উপর তাকে বেশ করে বিছিয়ে বাঘকে বললো মাদুরের উপর বসতে তাকে সে জলখাবার খেতে দেবে। দেখ না বাঘ লাফিয়ে মাদুরের উপর বসতে গেল সঙ্গে সঙ্গে সে কুয়োর ভেতর পড়ে গেল। তখন শিয়াল মামাকে বলে 'মামা খুব করে জল খাও, একটুও রেখো না যেন।' এইভাবে শিয়াল বাঘকে জব্দ করেছিল।

প্রশ্ন : তাই বাঘ তাতে ডুবে মারা যায়নি—বাঘ কোথায় ডুবে গিয়েছিল? সে মারা যায়নি কেন?

উত্তর : শিয়ালের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে একটি কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। কুয়োর ভিতরে বেশি জল ছিল না তাই বাঘ ডুবে মারা যায়নি।

 প্রশ্ন : বেচারি না খেয়ে না খেয়ে শেষে আধমরা হয়ে গেল।—কার কেন এরূপ অবস্থা হয়?

উত্তর ঃ শিয়াল বাঘের হাত থেকে বাঁচতে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে লাগল। ঠিকমতো সে খেতে পেল না। শেষে সে আধমরা হয়ে গেল।

প্রশ্ন : এমন হলে তো মরেই যাবো–মরা থেকে বাঁচতে শিয়াল কি সিদ্ধান্ত নিল?

উত্তর : বাঘের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে না খেতে পেয়ে শিয়াল মৃতপ্রায় হয়ে উঠলো। তখন সে সিদ্ধান্ত নিল বাঘ মামার কাছে সে যাবে। তাকে যদি খুশি করতে পারে। তাহলে সে হয়তো বেঁচে যাবে।

প্রশ্ন : শিয়াল অমনি ছুটে এসে দুহাতে তার পায়ের ধুলো নিয়ে বললে, —–শিয়াল কার কাছে ছুটে এসেছিল এবং সে কি বলেছিল?

উত্তর:  শিয়াল বাঘ মামার কাছে ছুটে এসে পায়ের ধুলো নিয়ে বলল তাকে আর খুঁজতে। হবে না তাকে খুঁজতে বাঘের খুব কষ্ট হয়েছে। এই দেখে শিয়ালের খুব কান্না পাচ্ছিল। বাঘ মামাকে সে খুব ভালোবাসে তাই সে আবার ফিরে এসেছে। আর তাকে কষ্ট করে খুঁজতে হবে না ঘরে বসেই শিয়ালকে যেন সে মারে বা শাস্তি দেয়।

প্রশ্ন : 'হতভাগা পাজি, আমাকে কুয়োয় ফেলে দিয়েছিলে কেন?’–এর উত্তরে শিয়াল কি বলেছিল?

 উত্তর : শিয়াল বলেছিল বাঘ মামাকে কখনও সে কি কুয়োতে ফেলতে পারে? এটা বাঘের ভুল ধারণা। সেখানকার মাটি বড্ড নরম ছিল, তার ওপর বাঘ লাফিয়ে পড়েছিল, তাই গর্ত হয়ে গিয়েছিল। বাঘের মতো বীর মামা কোথাও নেই।

প্রশ্ন : শিয়াল নদীর ধারে কি দেখেছিল? 

উত্তর: শিয়াল নদীর ধারে দেখল বিশ হাত লম্বা একটি কুমির ডাঙায় রোদ পোয়াচ্ছে।

প্রশ্ন : সে তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে বাঘকে বলল। বাঘ কে কি বলল?

উত্তর : শিয়াল তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে বাঘ মামাকে বলল তার জন্য একটি নৌকা কিনেছে সে যেন সেটা দেখতে যায়।

 প্রশ্ন : তা দেখে শিয়াল নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল। –কি দেখে শিয়াল নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল।

উত্তর : শিয়াল নদীর তীরে একটি কুমিরকে রোদ পোহাতে দেখেছিল। তখনই তার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। বাঘ কে জব্দ করার জন্য তার কাছে গিয়ে বলল সে একটা নৌকা কিনেছে বাঘ যেন সেটা দেখতে আসে। বোকা বাঘ কুমিকে নৌকা মনে করে তার উপর লাফিয়ে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে তাকে কামড়ে ধরে জল নিয়ে নামলো। এই দেখে শিয়াল নাচতে নাচাতে বাড়ি ফিরল।


• রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর


প্রশ্ন:  বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নে গল্পে কিভাবে শিয়াল তার মামাকে জন্ম করেছিল তা বিষয়বস্তু অনুসরণে লেখ।


উত্তরঃ পূর্বে বাঘের লেজে বাঁধা শিয়াল আছাড় খেয়ে মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে দেখা দিল তার বাঘ মামার উপরে রাগ এবং প্রতিশোধ স্পৃহা। তাই গল্পে দেখা যার শিয়াল বাঘকে জব্দ করার জন্য ফন্দি আটে। শিয়াল একটি নতুন গর্ত খুঁজে বার করে। সেই গর্তে কাছে একটি কুয়ো ছিল। একটি মাদুর নদীর ধার থেকে এনে তার ওপর বিছিয়ে দেয়। আর বাঘকে গিয়ে বলে তার নতুন বাড়ি দেখতে যাবার জন্য। শুনে বাঘ তখনই নতুন বাড়ির দেখতে গেলো। শিয়াল কুয়োর মুখে বিছানো মাদুরটা দেখিয়ে বাঘ মামাকে বসতে বলল। তার জন্য জল খাবার আছে শুনে বোকা বাঘ মাদুরের উপর লাফিয়ে বসতে গেল অমনি সে কুয়োর ভিতরে পড়ে গেল। কুয়োর ভেতর জল কম ছিল তাই বাঘ তাতে ডুবে মারা যায়নি। কোন রকমে থেকে উঠে বাঘ শিয়ালকে খুঁজতে লাগল। শিয়াল তার আগেই পালিয়ে গিয়েছিল, তাকে কিছুতেই খুঁজে পাওয়া গেল না।

এদিকে শিয়াল বাঘের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়ায়। তার ঠিকমতো খাবার-দাবারজোটে না। না খেয়ে শেষে মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। তখন সে ভাবল এইরকম ভাবে দিনের পর দিন কাটতে লাগল সে তো মরেই যাবে। তার থেকে বরং সে বাঘের সঙ্গে দেখা করুক। কোন ভাবে বাঘকে খুশি করতে পারলে হয়তো বেঁচে যেতে পারে। তাই সে ভয়ে ভয়ে বাঘের সঙ্গে দেখা করে।

শিয়াল বাঘ মামার কাছে ছুটে এসে পায়ের ধুলো নিয়ে বলল তাকে আর খুঁজতে হবে না তাকে খুঁজতে বাঘের খুব কষ্ট হয়েছে। এই দেখে শিয়ালের খুব কান্না পাচ্ছিল। বাঘ মামাকে সে খুব ভালোবাসে তাই সে আবার ফিরে এসেছে। আর তাকে কষ্ট করে খুঁজতে হবে না ঘরে বসেই শিয়ালকে যেন সে মারে বা শাস্তি দেয়। শিয়ালের কথায় বাঘ ভারি থতমত খেয়ে গেল। সে তাকে মারল না খালি ধমক দিয়ে বলল শিয়াল কেন তাকে কুয়োয় ফেলে দিয়েছিল। শিয়াল তখন জিভ কেটে কানে হাত দিয়ে বলল বাঘ মামাকে কখনও সে কি কুয়োতে ফেলতে পারে? এটা বাঘের ভুল ধারণা। সেখানকার মাটি বড্ড নরম ছিল তার ওপর বাঘ লাফিয়ে পড়েছিল তাই গর্ত হয়ে গিয়েছিল। বাঘের মতো বীর মামা কোথাও নেই। এই কথা শুনে বাঘের রাগ গলে জল হয়ে গেল। শিয়ালের সঙ্গে সে ভাব করে নিল।

এর পরে আহত ও ক্রুদ্ধ বাঘের হাত থেকে তোর দূর্বুদ্ধির দ্বারা চিরতরে রক্ষা পেতে বাঘকে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে কুমিরকে নৌকা বলে চালিয়ে তার উপরে উঠতে বলায় বাঘকে কুমির কামড়ে জলে ধরে টেনে নিয়ে গেল। বাঘের অন্তিম পরিণতি ঘটলো। শিয়াল ও নিশ্চিন্ত হল বাঘ আর তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। এই দেখে শিয়াল নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল। এইভাবে শিয়াল বাঘকে শায়েস্তা করেছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনী সংক্ষেপ আলোচনা করো।

  ★ধর্মমঙ্গলের কাহিনি:– ধর্মমঙ্গল কাব্যের দুটি কাহিনি—হরিশ্চন্দ্র ও লাউসেনের কাহিনি।   ১. হরিশ্চন্দ্রের কাহিনি:– রাজা হরিশ্চন্দ্র ও তার রানি মদনা নিঃসন্তান হওয়ায় সমাজে লোকনিন্দার ভয়ে মনের দুঃখে ঘুরতে ঘুরতে বল্লুকা নদীর তীরে উপস্থিত হয়ে দেখেন সেখানে ধর্মঠাকুরের ভক্তেরা ঘটা করে দেবতার পূজা করছেন। রাজা ও রানি তাদের কাছে ধর্মঠাকুরের। মাহাত্ম্য শুনে ধর্মঠাকুরের পূজার্চনা করে শর্তসাপেক্ষে বর লাভ করেন। শর্ত হল এই তাদের পুত্রকে ধর্মঠাকুরের কাছে বলি দিতে হবে। যথাসময়ে মদনার পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। রাজা ও রানি পুত্রকে পেয়ে ধর্মঠাকুরের কাছে বলি দেওয়ার পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভুলে যান। ধর্মঠাকুর ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে একদিন হরিশ্চন্দ্রের কাছে উপস্থিত হন। সেদিন ছিল। একাদশীর পারণ; ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণ রাজপুত্র লুইধরের মাংস আহার করতে চাইলে রাজা ও রানি পুত্রকে বধ করে তার মাংস রান্না করলেন। রাজা ও রানির এই আনুগত্য ও নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট হয়ে ধর্মঠাকুর লুইধরকে জীবিত করে পুনরায় রাজা-রানির কাছে ফিরিয়ে দেন। এরপর রাজা ও রানির প্রচেষ্টায় ধর্মঠাকুরের পূজা মহাসমারোহে আয়োজিত হতে থাকে। ২. লাউসেনের কাহিনি:...

ধর্মমঙ্গল কাব্যের অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ কবি ও তাঁর কৃতিত্বের পরিচয় দাও।।।।

         ■ অষ্টাদশ শতাব্দী – শ্রেষ্ঠ কবি                    • ঘনরাম চক্রবর্তী ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি হলেন ঘনরাম চক্রবর্তী। ঘনরাম অষ্টাদশ শতাব্দীর শক্তিমান কবি। মঙ্গলকাব্যের ঐশ্বর্যযুগের শেষ পর্যায়ে রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়ন, ঘনরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল এবং ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল নির্বাণোন্মুখ দীপশিখার মতো সর্বশেষ জ্যোতি।  সুকুমার সেন লিখেছেন,– “ধর্মমঙ্গল রচয়িতাদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত ও দক্ষ ছিলেন ঘনরাম চক্রবর্তী। ঘনরাম সুলেখক ছিলেন। তাঁহার রচনা সর্বাধিক পরিচিত ধর্মমঙ্গল কাব্য”। ( বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫১ )।  অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও লিখেছেন, –“আধুনিক যুগের বাঙালী সমাজ তাঁহার কাব্য হইতেই ধর্মমঙ্গল কাব্যের নূতনত্ব উপলব্ধি করিয়াছিলেন। এই শাখার অন্যান্য শক্তিশালী কবি অপেক্ষা ঘনরাম অধিকতর ভাগ্যবান। কারণ ধর্মমঙ্গলের কবিদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম মার্জিত রুচির নাগরিক সমাজে পরিচিত হন। ( বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, তৃতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় পর্ব, পৃষ্ঠা-৯৮ ...

বাংলা সাহিত্যের আদিপর্বে বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা এবং বিবর্তনের ইতিহাস। সমস্ত সংক্ষিপ্ত ও অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ....

সংক্ষিপ্ত ও অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ....                                                  প্রতিটি প্রশ্নের মান ১/২ 1. ভারতবর্ষের প্রথম সাহিত্যিক ভাষারূপে কোন ভাষার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে? উত্তর : আনুমানিক খ্রিঃ পূর্বঃ ৬০০-২০০ খ্রিঃ মধ্যে প্রচলিত 'পালি' ভাষাকে লোক ভারতের প্রথম সাহিত্যিক ভাষা হিসাবে মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে। 2. পালি ভাষার উৎপত্তি কীভাবে ঘটে? উত্তর : বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র সংগ্রন্থনের মৌলিক প্রয়োজন থেকেই পালি ভাষার প্রথম উৎপত্তি ঘটেছে বলে সাহিত্য ঐতিহাসিকরা মনে করেছেন। 3. কোন্‌ সময়কালে সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে নানা শাস্ত্র ও কাব্যগ্রন্থ রচনার কথা জানা যায়? উত্তর : পাল রাজাদের আমলে সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন শাস্ত্র এবং কাব্যগ্রন্থ রচনার সুনিশ্চিত প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এইসব রচনার প্রত্যক্ষ নিদর্শন অপ্রাপ্য থাকায় সাহিত্য ঐতিহাসিকরা তিব্বতি ভাষার অনুবাদ গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে থাকেন।  4. বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃত সাহিত্য র...