“টুনটুনি আর রাজার কথা” গল্প অবলম্বনে টুনটুনির আর রাজার কথা গল্পে রাজার পরিণতি কি হয়েছিল আলোচনা করো।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ টুনটুনির আর রাজার কথা গল্পে রাজার পরিণতি কি হয়েছিল আলোচনা করো।
অথবা
উত্তরঃ টুনটুনি আর রাজার কথা গল্প দেখা গেছে টুনটুনি রাজার একটি টাকা বাড়িতে নিয়ে আসে। সেটি রাজার সহ্য হয় না। রাজার লোক দিয়ে সেই টাকা নিয়ে আসে। তখন টুনটুনি বলে—রাজা বড় ধনে কাতর/ টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর। এই কথা শোনার পর রাজা একটু নরম হন। রাজার লোক গিয়ে টাকাটা টুনটুনিকে ফেরত দেয়। টাকা ফিরে পেয়ে আনন্দে বলে ওঠে রাজা ভারি ভয় পেল। টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল।
এই কথা শুনে রাজা বেজায় রেগে ওঠেন। রাজা তার লোককে নির্দেশ দেন টুনটুনিকে ধরে আনতে সে টুনটুনি ভাজা খাবে। রাজার লোক টুনটুনিকে ধরে নিয়ে এসে রাজার কাছে তুলে দেয়। রাজা টুনটুনিকে মুঠোয় করে নিয়ে বাড়ির ভিতর রানীদের বলে পাখিটাকে ভেজে তাকে খেতে দিতে। সাতজন রানী মিলে সেই পাখিটাকে দেখতে থাকে। এইভাবে একজন আরেকজনকে হাতে দিতে গিয়ে পাখিটা পালিয়ে যায়। তখন রাজার ভয়ে রানীরা রাজাকে একটি ব্যাঙ ভেজে খেতে দেয়। রাজা ব্যাঙকে টুনটুনি ভেবে খেয়ে নিশ্চিন্ত হন যে বিরক্ত করার কেউ নেই। রাজা ভাবে পাখিকে এবার জব্দ করা গেছে। এমন সময় টুনটুনি পাখি বলে ওঠে –
বড় মজা, বড় মজা,রাজা খেলেন ব্যাঙ ভাজা!
শুনেই তো রাজামশাই ক্ষেপে ওঠেন। তিনি বমি করার চেষ্টা করেন। তারপর রেগে গিয়ে জল্লাদকে বলেন সাত রানীর নাক কেটে ফেলতে। জল্লাদ গিয়ে সাত রানীর নাক কেটে ফেলে। তখন টুনটুনি বলে—
এক টুনিতে টুনটুনাল, সাত রানীর নাক কাটল।
এবার রাজা রেগে গিয়ে বলেন টুনটুনিকে ধরে নিয়ে আসতে তিনি এবার গিলে খাবেন। রাজার কথামতো টুনটুনিকে ধরে নিয়ে আনা হলো। মুখে জল নিয়ে টুনটুনিকে মুখে পুরে চোখ বুজে রাজা ঢক করে টুনটুনিকে গিলে ফেললেন। কিন্তু মস্ত ঢেকুর তোলার সঙ্গে সঙ্গেই টুনটুনি মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন সকলেই হতভম্ব হয়ে গেল। রাজা নির্দেশ মতো দুশো লোক টুনটুনিকে ধরে নিয়ে এলো। এইবার সিপাই এসে রাজা মশাইয়ের কাছে দাড়ালো এবং ঠিক করল টুনটুনি রাজার মুখ থেকে বের হলেই তাকে দু'টুকরো করে ফেলবে।
এবার টুনটুনিকে গিলেই রাজামশাই দুই হাতে মুখ টেপে বসে থাকলেন যাতে টুনটুনি আর পালিয়ে তে না পারে। কিন্তু টুনটুনি পেটের ভিতর ছটফট করতে থাকে। খানিক বাদেই রাজা বমি করার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে টুনটুনি মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সিপাই তখন থতমত খেয়ে তলোয়ার দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে রাজামশায়ের নাকে পড়ল। রাজামশাই ভয়ানক চিৎকার করে উঠলেন সভার লোক চিৎকার করতে লাগলো। ডাক্তার এসে ওষুধ দিয়ে পটি বেঁধে অনেক কষ্টে রাজামশাইকে বাঁচালেন। টুনটুনি রাজার অবস্থা দেখে বলতে লাগলো—
নাক-কাটা রাজা রে, দেখ তো কেমন সাজা রে!
এই বলে সে দেশ থেকে চলে গেল। রাজার লোক টুনটুনির বাসায় এসে দেখল বাসা খালি পড়ে আছে।
আপাতদৃষ্টিতে গল্পটি খুবই হাসির এবং মজার। শিশুদের কাছে গ্রহণযোগ্য বটেই। শিশুরা নাক কাটার পার্থিব যন্ত্রণার কথা তারা বোঝে না। তারা দেখছে কিভাবে একটি ছোট্ট দুর্বল প্রাণী শক্তিশালী ক্ষমতাশালী মানুষকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে। যদি অন্য অর্থ করতেই হয় তবে বলা যায় নাক কাটা যাওয়া মানে কিন্তু সম্মানহানি ঘটা। রাজা যেমন রানীদের শাস্তি স্বরূপ নাক কেটে দিয়েছিলেন তেমনি সিপাই-এর নির্বুদ্ধিতায় রাজার নাক কাটা গেলো। অর্থাৎ রাজারও সম্মানহানি ঘটল একটি ছোট্ট টুনটুনির কাছে। টুনটুনি এখানে বুদ্ধিমান বিদ্রোহের প্রতীক, সে বারবার বুদ্ধি খাটিয়ে রাজাকে পরাজিত করেছে। রাজা শক্তিশালী হলেও নির্বোধ। ক্ষমতার দত্তে নিজের বুদ্ধি কি হারিয়ে ফেলেছে। একটি ছোট্ট ক্ষুদ্র প্রাণীর বুদ্ধির কাছে বারবার পরাজিত হয়েছে। তাই টুনটুনির বিদ্রোহকে কোন শক্তি প্রয়োগ করে দমানো যায় না। টুনটুনি আসলে মানুষের ভিতরকার নির্ভীক স্বাধীন সত্তা। তাকে দমন বশীভূত করতে গেলে অপমানিত হতে হয়। রাজার পরিণাম সেই দিককেই তুলে ধরেছে। গল্পটি অবশ্যই শিক্ষামূলক৷
সুন্দর
উত্তরমুছুন