বাংলা সাহিত্যের আদিপর্বে বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা এবং বিবর্তনের ইতিহাস। সমস্ত সংক্ষিপ্ত ও অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ....
সংক্ষিপ্ত ও অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ....
প্রতিটি প্রশ্নের মান ১/২
1. ভারতবর্ষের প্রথম সাহিত্যিক ভাষারূপে কোন ভাষার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে?
উত্তর : আনুমানিক খ্রিঃ পূর্বঃ ৬০০-২০০ খ্রিঃ মধ্যে প্রচলিত 'পালি' ভাষাকে লোক ভারতের প্রথম সাহিত্যিক ভাষা হিসাবে মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে।
2. পালি ভাষার উৎপত্তি কীভাবে ঘটে?
উত্তর : বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র সংগ্রন্থনের মৌলিক প্রয়োজন থেকেই পালি ভাষার প্রথম উৎপত্তি ঘটেছে বলে সাহিত্য ঐতিহাসিকরা মনে করেছেন।
3. কোন্ সময়কালে সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে নানা শাস্ত্র ও কাব্যগ্রন্থ রচনার কথা জানা যায়?
উত্তর : পাল রাজাদের আমলে সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন শাস্ত্র এবং কাব্যগ্রন্থ রচনার সুনিশ্চিত প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এইসব রচনার প্রত্যক্ষ নিদর্শন অপ্রাপ্য থাকায় সাহিত্য ঐতিহাসিকরা তিব্বতি ভাষার অনুবাদ গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে থাকেন।
4. বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃত সাহিত্য রচনাকারী কয়েকজন সাহিত্যিকের নাম করো।
উত্তর : বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃত ভাষায় সাহিত্য রচনাকারী কয়েকজন কবি হলেন—
চর্যাপদ খ্যাত লুইপাদ, কৃষ্ণপাদ, ভুসুকুপাদ প্রমুখ।
5. বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃত সাহিত্যধারার অস্তিত্ব কতদিন পর্যন্ত ছিল?
উত্তর : দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত অর্থাৎ বাংলাদেশে হিন্দু বৈষ্ণব সেন রাজবংশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃত সাহিত্যধারা ক্রমশ অবলুপ্ত হয়ে যায়।
6. বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত কোন্ গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে আদি গ্রন্থ হিসাবে সুপরিচিত হয়ে আছে?
উত্তর : বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত চর্যাগীতি কোষ গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের আদি গ্রন্থ হিসাবে সুপরিচিত।
7. প্রাচীন বাংলা ভাষার আদি গ্রন্থটি কে কোথা থেকে আবিষ্কার করেন?
উত্তর : প্রাচীন বাংলা ভাষার আদি গ্রন্থ চর্যাগীতি কোষ গ্রন্থটি মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে আবিষ্কার করেছিলেন।
8. নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদের পুঁথি ছাড়া আর কোন্ কোন্ পুঁথি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় আবিষ্কার করেছিলেন?
উত্তর : নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের পুঁথির সঙ্গে আবিষ্কার করেছিলেন অদ্বয় বজ্রের সংস্কৃত টীকাসহ সরোজ বজ্রের দোহাকোষ, কৃষ্ণচার্যের দোহাকোষ এবং ডাকার্ণব নামক পুঁথি।
9. চর্যাপদ সহ আবিষ্কৃত পুথিগুলির মূল ভাববস্তু কোন্ ধর্মকেন্দ্রিক?
উত্তর : চর্যাপদ সহ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুঁথিগুলির মূল ভাববস্তুটি সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের সাধনপন্থা কেন্দ্রিক। গ্রন্থগুলির মধ্য দিয়ে বৌদ্ধধর্ম কথা ‘সন্ধ্যাভাষা’র আড়ালে একদিকে যেমন সমাজের বিবিধ রূপকে ফুটিয়ে তুলেছে, তেমনি ধর্মতত্ত্বকে বৈচিত্র্যময় রূপকের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
10. বৌদ্ধসংস্কৃত গ্রন্থগুলি ক-টি ভাগে বিভক্ত ও কী কী?
উত্তর : বৌদ্ধ সংস্কৃত গ্রন্থগুলিকে
হীনযান মতানুযায়ী এবং মহাযান মতানুযায়ী দুইটি শাখায় বিভক্ত করা যায়।
11. হীনযান মতাবলম্বী কয়েকটি বৌদ্ধধর্ম বিষয়ক গ্রন্থাবলীর নাম উল্লেখ করো।
উত্তর : হীনযান ‘মতাবলম্বী কয়েকটি গ্রন্থাবলী হল— ‘মহাবস্তু’ বা ‘মহাবস্তুবদান’, ‘বুদ্ধচরিত’ এবং 'অবদান সাহিত্য'।
12. মহাযান শাখার কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর : মহাযান শাখার গ্রন্থগুলির মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত 'ললিত বিস্তর', ' ‘সুখাবতী ব্যূহ’, ‘জাতকমালা' প্রভৃতি। ‘সদ্ধর্ধপুণ্ডরীক’,
13. 'মহাবস্তু' কোন্ ধর্ম সম্প্রদায়ের গ্রন্থ ? এর বিষয়বস্তুর পরিচয় দাও।
উত্তর : মহাসাঙ্কি লোকোত্তরবাদ বৌদ্ধ ধর্মসম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল—‘মহাবস্তু’ বা ‘মহাবস্তুবদান’। গ্রন্থটি মহামতি গৌতমবুদ্ধের জীবনী ও জীবনাদর্শের মহাকোষ গ্রন্থ। এই গ্রন্থে নিদানকথা, জাতক, বুদ্ধবচন এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু সন্ন্যাসিনীদের আচরণ সম্পর্কে আলোচনা আছে।
14. বৌদ্ধধর্মগ্রন্থ 'অবদান সাহিত্যে'র 'অবদান' শব্দের অর্থ কী? অবদান সাহিত্যের মূল বিষয় কী ছিল?
উত্তর : বৌদ্ধধর্মের সংস্কৃত সাহিত্য অবদান সাহিত্য আসলে একটি গল্পগ্রন্থ। 'অবদান' শব্দের অর্থ স্মরণীয় কীর্তি কাহিনি। অবদান সাহিত্যের গল্পগুলির মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ আচার্য, শ্রমণ, ভিক্ষু ও উপাসকদের উল্লেখযোগ্য কর্মের কথা জানা যায়।
15. ‘ললিত বিস্তর’ গ্রন্থের আলোচ্য বিষয় কী?
উত্তর : সাতাশটি অধ্যায়ে বিভক্ত 'ললিত বিস্তর’ আসলে গদ্য-পদ্যে মিশ্রিত বুদ্ধদেবের জীবনী গ্রন্থ। এটি সংস্কৃত ভাষার লিখিত। পুরাণের মতো এখানেও ভগবান বুদ্ধের অতি লৌকিক জীবন কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
16.' Sanskrit Buddhist Literature in Nepal' গ্রন্থটি কার রচনা?
উত্তর : Sanskrit Buddhist Literature in Nepal (১৮৮২) গ্রন্থটি ড. রাজেন্দ্রলাল মিত্রের রচনা।রাজেন্দ্রলাল মিত্র এই গ্রন্থে নেপাল থেকে আবিষ্কৃত অবদান শতক, দিব্যাবদানমালা বোধিসত্ত্বাবদান কল্পলতা, দ্বাবিংশ অবদান, কল্পক্রমাবদান প্রভৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দান করেছিলেন।
17. প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের কোন্ কোন্ রচনার মধ্যে বৌদ্ধ সাহিত্যের উপাদান পাওয়া যায়?
উত্তর : প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে দোহাকোষের মতো অবহট্ট রচনায় এবং চর্যাগীতি পদাবলী, নাথ সাহিত্য, শূন্যপুরাণ, ডাকের বচন প্রভৃতি বাংলা রচনার মধ্যে বৌদ্ধসাহিত্যের উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়।
18. মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে বৌদ্ধধর্ম-সাহিত্যের প্রভাব কী লক্ষ করা গিয়েছিল কি?
উত্তর : প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের কয়েকটি রচনার মতো মধ্যযুগের নাথ সাহিত্য, ধর্মমঙ্গল, সুফী সাহিত্য এবং বাউল গানের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্যের ধারাটি পরিলক্ষিত হয়।
19. বাংলাদেশে কোন সময়কাল থেকে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব পড়েছিল?
উত্তরঃ খ্রিঃ পুঃ তিন শতকে সম্রাট অশোকের সময়কালে বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছিল। এরপর মাঝখানে কিছুটা সময়পর্ব বাদ দিলে (বাংলাদেশে সে সময় হিন্দু-বৌদ্ধ সংঘর্ষ, মাৎস্যন্যায় প্রভৃতি ঘটনা ঘটেছিল) পালরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রচারের ফলে বাংলাদেশে বৌদ্ধপ্রভাব বিস্তারলাভ করে।
20. বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্মকাল রূপে ইতিহাসে কোন্ সময়পর্বটি চিহ্নিত?
উত্তরঃ পাল রাজাদের সময়কাল অর্থাৎ দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্মকাল সূচিত হয়েছিল।
21. বৌদ্ধধর্ম দর্শন প্রভৃতি নিয়ে কোন্ কোন্ ভাষায় সাহিত্য রচিত হয়েছিল?
উত্তর : বৌদ্ধধর্ম, দর্শন, তন্ত্র প্রভৃতি নিয়ে ভারতবর্ষে পালি, সংস্কৃত ও অবহট্ঠ ভাষায় বিপুল সাহিত্য গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে বাংলা সংস্কৃত, ফারসিতে এই শ্রেণির বিভিন্ন গ্রন্থ ও টীকা ভাষ্য রচনার কথাও জানা যায়।
22. প্রাচীনযুগের একটি উল্লেখযোগ্য বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম লেখো। সেখানকারএকজন শিক্ষাবিদের নাম করো।
উত্তর : প্রাচীন যুগের একটি উল্লেখযোগ্য বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়।
সেখানকার অধ্যক্ষ শীলভদ্র ছিলেন বাঙালি পণ্ডিত।
23. বৌদ্ধতন্ত্রে দক্ষ গুণীকে কী বলা হত?
উত্তর : বৌদ্ধতন্ত্রে দক্ষ গুণীকে ‘ডাক' বলা হত।
24. প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শনের নাম কী? কোন্ ধর্ম দর্শনের প্রভাবে গ্রন্থটি রচিত ?
উত্তর: প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শনের নাম চর্যাপদ বা চর্যাগীতি কোষ। গ্রন্থটি বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদের ধর্মীয় পটভূমি, যেখানে বৌদ্ধদর্শনের শূন্যতত্ত্ব, মায়াবাদ, না— বিজ্ঞানবাদ ও যোগাচারের পাশাপাশি মিষ্টিক ভাববাদের পরিচয়ও পাওয়া যায়।
25. চর্যাপদের পুথিটির পরিচয় দাও।
উত্তর : চর্যাপদের পুথিটির তালপাতার এবং সেটি পুরোনো নেপালি অক্ষর ‘নেওয়ারি’-তে লিপিবদ্ধ ছিল।
26. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কোন সময় চর্মা পুথিটি আবিষ্কার করেছিলেন?
উত্তর : মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী পুরোনো পুথির সন্ধানে চারবার নেপাল ভ্রমণ করেছিলেন। তৃতীয়বার ভ্রমণের সময় (১৯০৭ খ্রি:) তিনি চর্যপুথিটি আবিষ্কার করেন।
27. কত সালে কোথা থেকে কী নামে কে চর্যা পুথিটি গ্রন্থাগারে প্রকাশ করেন ?
উত্তর : বাংলা ১৩২৩-এর শ্রাবণ মাসে (ইং-১৯৯৬ খ্রিঃ) কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা' নামে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী গ্রন্থখানি প্রকাশ করেন।
চর্যাচর্য বিনিশ্চয় সরহপাদে ও কৃষ্ণপাদের দোহা (টীকাসহ) এবং ডাকাপর্ব গ্রন্থটির অন্তর্ভূক্ত হয়।
28. চর্যাপদের ভাষার সঙ্গে ওড়িয়া ভাষার মিল পেয়েছিল কে?
উত্তর: বিজয় মজুমদার তার 'The History of Bengali Language' (১৯২০) এর ত্রয়োদশ বক্তৃতামালায় উল্লেখ করেছিলেন চর্যাপদের সঙ্গে ওড়িয়া ভাষার মিল বেশি।
29. চর্যাপদের ভাষাকে আদিম বাংলাভাষার নমুনা বলে কে প্রমাণ করেন?
উত্তর : ১৯২৬ সালে ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর “The Origin and Devel opment of the Bengali Language' গ্রন্থে ভাষা বিজ্ঞান ও ব্যাকরণের দ্বারা প্রমাণ করেন চর্যাপদের ভাষা আদিম বাংলা ভাষার নমুনা।
30. চর্যাপদের ধর্মতত্ত্ব ও দার্শনিকতার কথা প্রথম কোন গ্রন্থ থেকে জানা যায়?
উত্তর : মহম্মদ শাহীদুল্লাহের গবেষণা পত্রে চর্যাগানগুলির ধর্মতত্ত্ব ও দার্শনিকতা নিয়ে প্রথম আলোচনা পাওয়া গেলেও শশিভূষণ দাসগুপ্তের 'Obscure Religious cults as Back ground of Bengali Literature' (১৯৪৬) গ্রন্থে চর্যাগানের ধর্ম, দর্শন, সাধনার কথা উল্লিখিত হয়েছে।
31. চর্যাপদাবলীর তিব্বতি অনুবাদ কে আবিষ্কার করেন? তিব্বতি অনুবাদকের নাম বলো।
উত্তর : চর্যাপদাবলীর তিব্বতি অনুবাদ আবিষ্কার করেছিলেন ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী। চর্যাপদের তিব্বতি টীকার অনুবাদক ছিলেন কীর্তিচন্দ্ৰ।
32. চর্যাপদ পুথির প্রকৃত নাম কী?
উত্তর : চর্যাপদ পুথির প্রকৃত নাম ‘চর্যাগীতিকোষ'।
33. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কী মূল চর্যাপদের পুথি এদেশে নিয়ে এসেছিলেন? তিনি কি মূল গ্রন্থটি পেয়েছিলেন?
উত্তর: না, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মূল চর্যাপদের পুথি নেপাল থেকে এদেশে আনতে পারেন নি। তিনি প্রাপ্ত পুথির একটি প্রতিলিপি নিয়ে এসেছিলেন। এ দেবনগরী হরফে লেখা সেই প্রতিলিপিটি বর্তমানে এশিয়াটিক সোসাইটিতে রয়েছে। হরপ্রসাদের প্রাপ্ত পুঁথিটি মূল চর্যাগ্রন্থ নয়, সেটি মুনিদত্ত রচিত একটি সংস্কৃত টীকা গ্রন্থ যার নাম ‘চর্যাগীতি কোষবৃত্তি।
34. চর্যাপদ গ্রন্থটির সংস্কৃত টীকা গ্রন্থটির নাম কী? সেটি কার রচনা?
উত্তর : চর্যাপদ গ্রন্থটির সংস্কৃত টীকার নাম চর্যাগীতি কোষবৃত্তি (নির্মলগিরাটীকা। সেটির লেখক মুনিদত্ত।
35. চর্যাপদের তিব্বতী টীকা গ্রন্থটি কে রচনা করেন? সেটি কোন্ গ্রন্থের অনুবাদ?
উত্তর : চর্যাপদের তিব্বতি টীকা গ্রন্থটি কীর্তিচন্দ্র রচনা করেন।
মুনিদত্তের সংস্কৃত টীকা গ্রন্থটির অনুবাদ করেছিলেন কীর্তিচন্দ্র।
36. চর্যাপদের প্রাপ্ত পুথিতে মোট কতজন কবির নাম মেলে?
উত্তর : চর্যাপদের প্রাপ্ত পুথিতে মোট ২৪ জন কবি বা পদকর্তার নাম মেলে।
37. কয়েকজন চর্যাপদকর্তার নাম উল্লেখ করো।
উত্তর : কয়েকজন চর্যাপদকর্তা হলেন—লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, ঢেন্টনপাদ, কুক্কুরীপ
38. চর্যাপুথির আদি কবিরূপে কার কথা বলা হয়?
উত্তর : লুইপাদকে চর্যাগীতির আদি কবি বা পদকর্তা রূপে ধারণা করা হয়।
39. চর্যাকবিদের নামের সঙ্গে ‘পা’ বা ‘পাদ’ শব্দে যুক্ত থাকার কারণ কী?
উত্তর : 'পাদ' শব্দের অর্থ ছিল পূজনীয় ব্যক্তি। চর্যাকবিরা প্রায় প্রত্যেকেই বৌদ্ধধর্ম শুরু হওয়ায় তাদের শিষ্যরা পূজনীয় গুরুর নামের শেষে ‘পাদ’ যোগ করে দিতেন। তার সংস্কৃত টীকা গ্রন্থে মুনিদত্তও এজন্য কবিদের নামের শেষে পাদ শব্দের অবতারণ করেছিলেন।
40. চর্যাপদের 'চর্যা' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘চর্যা’ শব্দের দুটি অর্থ পাওয়া যায়। একটি হল আচার-আচরণ এবং অন্যটি হল অধ্যাত্বগীতি। চর্যাপদের ধর্মীয় কবিরা তাদের সুনির্দিষ্ট আচার-আচরণের কথা জানিয়েছিলেন এই অধ্যায় গীতিগুলির মধ্য দিয়ে।
41. চর্যাপদের ভাষা কী নামে পরিচিত?
উত্তর : চর্যাপদের ভাষাকে 'সন্ধ্যাভাষা' বলা হয়ে থাকে।
42. 'সন্ধ্যা (সন্ধা) ভাষা' কী?
উত্তর: প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের ভাষাকে সন্ধ্যাভাষা বলা হয়। সন্ধ্যাভাষা হল একপ্রকার সাংকেতিক অর্থ যার মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট ধর্মগোষ্ঠীর মানুষে আচার, আচরণের গোপনীয়তা রক্ষিত হয়। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ গূঢ়ার্থ না বুঝে সাধারণ অর্থ ।
43.‘পঞ্চকর্মেন্দ্ৰিয়' এর পরিচয় দাও।
উত্তর : চর্যাপদের তিব্বতী টীকায় ‘পঞ্চকর্মেন্দ্ৰিয়' কথা জানা যায়। চর্যাগীতির ‘পঞ্চ বি ডালি' অর্থাৎ রূপ বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার এবং বিজ্ঞানকে পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় বলে মনে করা হয়েছে।
44. চর্যাপদের সংস্কৃত টীকার নাম এবং তার গ্রন্থাকারের নাম কীভাবে জানা গেছে ।
উত্তর : কীর্তিচন্দ্র রচিত চর্যাপদের তিব্বতী টীকা অনুবাদ গ্রন্থ থেকে চর্যাপদের সংস্কৃত টীকা গ্রন্থনাম এবং গ্রন্থাকারের নাম জানা গেছে।
45. চর্যাগীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন কয়েকজন পণ্ডিত গবেষকদের নাম কে?
উত্তর : চর্যাগীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন কয়েকজন গবেষক হলেন ড. মুহ শহীদুল্লাহ, ড. সুকুমার সেন, রাহুল সাংকৃত্যায়ণ, ড. আর্নল্ড বেক প্রমুখ।
46. এমন একজন চর্যাপদকর্তার নাম উল্লেখ করো যার কোনো পদ পাওয়া যায়নি ।
উত্তর : চর্যাপদের পুথিতে লাড়ীডোম্বীপাদ এর নাম থাকলেও তাঁর রচিত কোনো পদ বা তার টীকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
47. চর্যাপদের ভাষার প্রধান ভাষাতাত্ত্বিক পটভূমি কোন্ অঞ্চল?
উত্তর : চর্যাপদের ভাষার প্রধান ভাষাতাত্ত্বিক পটভূমি রূপে পশ্চিমবঙ্গের নাম করা যায়।
48. চর্যাপদাবলী যে প্রাচীন বাংলা ভাষার সাহিত্য এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ আছে কি?
উত্তর : চর্যাপদের ভাষার অধিকাংশ শব্দরূপ, অধিকাংশ প্রবাদ প্রবচনের ব্যবহার এবং যৌগিক ক্রিয়াগুলি বাংলা ভাষার নিজস্ব রূপ। তাই চর্যাপদ যে প্রাচীন বাংলা ভাষার নিদর্শন সে সম্পর্কে আমাদের কোনো সংশয় নেই।
49. চর্যাপদের উল্লিখিত কোন্ শব্দের ব্যবহার বৌদ্ধদর্শনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী যুক্ত ?
উত্তর : বৌদ্ধদর্শনের ‘মহাসুহ’, ‘মোহতরু’, ‘খুটি’, ‘কাচ্ছি’, ‘কেডুআল’, ‘গঅণ’, ‘কুড়িয়া’ প্রভৃতি অসংখ্য শব্দের ব্যবহার প্রমাণ করে চর্যাগীতি পদাবলী গ্রন্থটি বৌদ্ধধর্ম-দর্শন তথা তান্ত্রিক সাধ্যসাধনার গ্রন্থ।
50. চর্যাপদের সাধনতত্ত্বে বৌদ্ধদর্শনের যে চক্রগুলির কথা জানা যায়, তার নামগুলি কী
উত্তর : চর্যাপদের সাধনতত্ত্বে বৌদ্ধদর্শনের নির্মাণচক্র, সম্ভোগচক্র, ধর্মচক্র, মহাসুখচক্রের নাম জানা যায়।
51. কোন্ রাগে সর্বাধিক চর্যাপদ রচিত হয়েছে?
উত্তর: ‘পটমঞ্জরী’ রাগে সর্বাধিক ১১টি চর্যার পদ রচিত হয়েছিল।
52. চর্যাপদে কোন্ ছন্দের সর্বাধিক প্রয়োগ দেখা যায় ?
উত্তর : চর্যাপদে পাদাকুলক ছন্দরীতির অনুসৃতি দেখা যায় সবচেয়ে বেশি।
53. ‘ধর্মাধর্মবিনিশ্চিয়' গ্রন্থটির লেখক কে? এটি কী জাতীয় গ্রন্থ?
উত্তর: ‘ধর্মাধর্মবিনিশ্চয়' গ্রন্থটি আচার্য জেতারির লেখা।
এটি বৌদ্ধধর্মদর্শন গ্রন্থ।
54. আদি সিদ্ধাচার্যরূপে কে পরিচিত আছেন ?
উত্তর : চর্যাপদকর্তা লুইপাদ আদি সিদ্ধাচার্যরূপে পরিচিত আছেন।
55. কে, কোন্ গ্রন্থে চর্যাপদগুলিকে মৈথিলী ভাষার আদি নিদর্শন বলে মনে করেছিলেন?
উত্তর : ড. জয়কান্ত মিশ্র তার 'A History of Maithili Literature' গ্রন্থে চর্যাগীতিগুলিকে মৈথিলী ভাষায় প্রথম নিদর্শন বলে মনে করেছিলেন।
56. 'অভিসময় বিহঙ্গ' নামক বৌদ্ধতান্ত্রিক গ্রন্থের রচনাকারের নাম বলো।
উত্তর ঃ লুইপাদ এবং দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ‘অভিসময় বিহঙ্গ' নামক বৌদ্ধতান্ত্রিক গ্রন্থের রচয়িতা।
57. চর্যাপদ রচনার কারণ কী ছিল বলে মনে হয়?
উত্তর : বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ তাদের ধর্মের গূঢ় সাধন পদ্ধতিকে শিষ্য পরম্পরায় দীর্ঘ সময়। সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রহেলিকাময় ভাষায় চর্যাগীতিগুলি রচনা করেছিলেন বলে মনে হয়।
58. চর্যাপদের কোনো ক্ষেত্রে হিন্দু বিরোধিতা লক্ষগোচর হয় কি?
উত্তর : বাংলার ইতিহাসে হিন্দু বৌদ্ধ সংঘর্ষের কথা সর্বজনস্বীকৃত। হিন্দুধর্ম নয় মূলত ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতায় বৌদ্ধ কবিগণ জেলে, শবর, ডোম প্রভৃতি অন্যজ শ্রেণির সংস্পর্শে নিজেদের অস্তিত্বের কথা কোনো কোনো পদে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
59. চর্যাপদে কোন্ ধর্মমতের প্রকাশ ঘটেছে?।
উত্তর : হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের সমন্বয়ে চর্যাপদগুলি রচিত হলেও আসলে বৌদ্ধদর্শনের শূন্যতত্ত্ব মায়বাদ প্রভৃতি এখানে অধিকমাত্রায় লক্ষগোচর হয়। ধ্যান ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রে সার্বিক মুক্তি তথা বোধিসত্ত্বলাভের কথাই চর্যাপদে মুখ্য।
60. চর্যাপদগুলিতে বৌদ্ধসাধনতত্ত্বের কোন্ রীতির পরিচয় আছে?
উত্তর : চর্যাপদগুলিতে বৌদ্ধ সহজিয়া সাধ্য সাধনতত্ত্বের কথা সন্ধ্যাভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কায়াসাধনার মূল অভিপ্রায়ের মাধ্যমে সহজানন্দ লাভ করার যে বৌদ্ধ সাধনা তাও ধরা পড়েছে চর্যাপদের বিভিন্ন পদগুলিতে।
61. পাল রাজাদের সময়কালকে সাংস্কৃতিক স্বর্ণযুগ বলার কারণ কী?
উত্তর : ৭৫০ খ্রিঃ থেকে ১১৬০ খ্রিঃ পর্যন্ত পালবংশের ১৮জন রাজা মোটামুটি শক্তিশাল এবং সুদক্ষ ছিলেন। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী এই পাল রাজাদের আমলে বৌদ্ধরা আঞ্চলিক ভাষা, শিশু ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটেছিল। তাই এ যুগকে সাংস্কৃতিক স্বর্ণযুগ বল অভিহিত করলে অত্যুক্তি হয় না।
62. পাল রাজাদের আমলে বৌদ্ধদের উল্লেখযোগ্য শিল্পচর্চার পরিচয় দাও।
উত্তর : পাল রাজাদের সহযোগিতায় বৌদ্ধরা মহাস্থানগড়ের পাথর ও ধাতুর মূর্তি তৈরি এবং পাহাড়পুরের টেরাকোটা মূর্তি তৈরির মাধ্যমে তাদের শিল্পচর্চার পরিচয় তুলে ধরেছিল।
63. প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে চর্যাপদ ছাড়া অন্য কয়েকটি রচনার নাম করো।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যে বৌদ্ধধর্মের পরিণতিরূপে চর্যাপদকে ধরলেও সে সময় আরও কয়েকটি রচনা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নিদর্শন মেলে। যেমন রামাই পণ্ডিতের শূন্যপুরাণ', হলায়ুধ মিশ্রের ‘সেক শুভোদয়া', 'ভুসুকু রচিত 'চতুরাভরণ' প্রভৃতি।
64. প্রাচীন বাংলার কয়েকটি মৌলিক ও টীকা গ্রন্থের নাম করো যেখানে বাংলা পদের চরণ বা ছড়ার ব্যবহার আছে।
উত্তর : প্রাচীন বাংলায় ‘সেক শুভোদয়া’, ‘সেকোন্ডেকা টীকা’ ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়', ‘বিদগ্ধমূর্খমণ্ডন' প্রভৃতি গ্রন্থে বাংলা পদের চরণ বা ছড়ার ব্যবহার দেখা যায়।
65. প্রাচীন বাংলায় কোনো অভিধান বা বিশ্বকোষের সন্ধান মিলেছিল কি?
উত্তর : প্রাচীন বাংলায় কোনো ‘মানসোপ্লাস’ নামক সংস্কৃত বিশ্বকোষ গ্রন্থে, বাদ্যঘটীয় সর্বানন্দ রচিত টীকা সর্বস্ব' গ্রন্থে, হেমচন্দ্ৰকৃত ‘দেশীনামমালা' 'তাম্রশাসনলিপি' এবং 'চৈনিক অভিধান'-এ বাংলা শব্দের সন্ধান মিলেছিল।
66. প্রাচীন বাংলার লোকসাহিত্য শাখারূপে কী দৃষ্টান্ত মেলে?
উত্তর : প্রাচীন বাংলায় নাথগীতিকা, হিন্দু কথা সাহিত্য, বচন, ছড়া, প্রবাদ এবং হেঁয়ালি লোকসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত।
67. সেক শুভোদয়া গ্রন্থটি কার রচনা? গ্রন্থটির বিষয়বস্তু দু-এক কথায় বলো।
উত্তর : সেন বংশের শেষ একজন রাজা লক্ষণ সেনের সভাপণ্ডিত হলায়ুধ মিশ্রের রচনা "সেক শুভোদয়া' গ্রন্থটি। গ্রন্থটির মধ্যে পীরমাহাত্ম্য, কয়েকটি আর্যা ও বাংলা গানের উল্লেখ আছে। ধর্মনিরপেক্ষ
মানবাশ্রিত রচনারূপে গ্রন্থটির পরিচয় দেওয়া যায়।
68. সেকোদ্দেশটীকা গ্রন্থটি কার রচনা?
উত্তর : সেকোেদ্দেশটীকা গ্রন্থটি নাড়পাদের রচনা।
69. বৌদ্ধকবি ধর্মদাসের লেখা গ্রন্থটির নাম করো।
উত্তর : বৌদ্ধকবি ধর্মদাসের লেখা গ্রন্থটির নাম ‘বিদগ্ধমুখমণ্ডণ’।
70. কার পৃষ্ঠপোষকতায় 'মানসোল্লাস' গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়?
উত্তর : সংস্কৃত বিশ্বকোষ 'মানসোল্লাস' গ্রন্থটি ১১২৯ খ্রিঃ মহারাষ্ট্রের চালুক্য বংশীয় রাজা।
তৃতীয় সোমেশ্বর ভূলোক মলের পৃষ্ঠপোষকতায় সংকলিত ও প্রকাশিত হয়।
71. দেশী নামমালার সংকলকের নাম কী? এটি কোন সময়ে রচিত?
উত্তর : দেশী নামমালার সংকলক হলেন আচার্য হেমচন্দ্র।গ্রন্থটি দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত।
72. 'অমরকোষের' টাকা গ্রন্থটির নাম কী ? গ্রন্থটির রচয়িতা ও রচনাকালের উল্লেখ করো।
উত্তর : সংস্কৃত ‘অমরকোষে’র টীকা গ্রন্থটির নাম 'ঢাকাসবঞ্জ'। গ্রন্থটি বন্দ্যঘটীয় সর্বানন্দ ১১৫৯ রচনা করেন।
73. লোককথার কোন বিষয়টির মধ্যে বৌদ্ধতন্ত্রের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়?
উত্তর : লোকসাহিত্যের অস্তগর্ত 'ডাকের বচন'-এর মধ্যে বৌদ্ধতন্ত্রের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
বৌদ্ধ পরিভাষায় 'ডাক' অর্থে স্বধর্মজ্ঞানী সিদ্ধপুরুষদের উল্লেখ করা হত।
74. চর্যাপদের কবি গোষ্ঠীর মধ্যে শ্রেষ্ঠকবি বলে কাকে মনে করা হয়?
উত্তর : চর্যাপদের কবিগোষ্ঠী বা পদকর্তাদের মধ্যে কাহ্নপা বা কানুপাকে শ্রেষ্ঠকবি বলে মনে করা হয়। চর্যাপদের সর্বাধিক পদও তার রচনা।
75. কোন গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রকাশ ঘটেছিল?
উত্তর : প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন 'চর্যাগীতিকোষ' এর প্রকাশের সঙ্গেসঙ্গে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐক্যেরও প্রকাশ ঘটে।
76. চর্যাপদের আবিষ্কারকে যুগান্তকারী ঘটনা বলে মনে করা যায় কি?
উত্তর : অবশ্যই চর্যাপদের আবিষ্কারকে যুগান্তকারী ঘটনা বলে উল্লেখ করা যায়। কেননা গ্রন্থটি বাংলা ভাষা তথা নব্য ভারতীয় আর্যভাষার প্রাচীনতম দৃষ্টান্ত।
তা ছাড়া এই আবিষ্কারের ফলে দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে পূর্বভারতের মানুষের ধর্ম দর্শন-বাস্তব ও সমাজজীবনের পরিচয়ও পাওয়া গেছে।
77. নেপালের রাজদরবার থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত গ্রন্থগুলির ভাষা কীরূপ ছিল?
উত্তর : হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তার আবিষ্কৃত সব কটি গ্রন্থের ভাষাই প্রাচীন বাংলা ভাষা বলে অনুমান করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ব্যাকরণ ভিত্তিক প্রমাণের সাহায্যে জানান চর্যাপদ-এর ভাষা প্রাচীন বাংলার আদি নিদর্শন এবং বাকিগুলির শৌরসেনী অপভ্রংশে রচিত।
78. সহজিয়া বৌদ্ধদের উত্তরাধিকারী রূপে মধ্যযুগে কোন্ কবিগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেছিলেন ড. সুকুমার সেন?
উত্তর : ড. সুকুমার সেন সহজিয়া বৈষ্ণবদেরকে সহজিয়া বৌদ্ধদের উত্তরাধিকারী বলে মনে করেছিলেন।
79. বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে পরবর্তীকালে কোন কোন সাহিত্যপথের মিল দেখা যায়?
উত্তর : বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শন তত্ত্বের সঙ্গে পরবর্তীকালে গৌড়বঙ্গে প্রচলিত নাম ধর্ম ও নাথ সাহিত্য, মঙ্গলকাব্যের কোনো কোনো স্থানে এবং সুফী গুরুবাদ ও বাউলগানের মধ্যে অনেক মিল লক্ষ করা গেছে।
80. বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের সংযোগ দেখিয়েছিলেন কে?
উত্তর : ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী মনে করতেন বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের যোগ রয়েছে। ধর্মঠাকুরের স্বরূপ কল্পনা করা হয়েছিল, চট্টগ্রামে পীরের মোকামের পাশে বৌদ্ধচর্চার কেন্দ্র ছিল রোসাঙ রাজার বুদ্ধচারে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় দৌলতকাজীর কাব্যে।
81. চর্যাপদের বৌদ্ধধর্মে বিবর্তনের দলিল বলে উল্লেখ করা যায় কি?
উত্তরঃ চর্যাপদের মধ্যে বৌদ্ধধর্ম-দর্শন-তন্ত্রসাধ্য-সাধনার তত্ত্বগুলি বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনায় কাব্যরূ লাভ করেছিল। জীবনরস-রসিক সিদ্ধাচার্যশিল্পীরা চর্যাপদের মতো আধ্যাত্মিক সংগীতের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধধর্মের গূঢ় সাধনার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তাই চর্যাপদকে বৌদ্ধধর্মের বিবর্তনের দলিল বলা যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন