সীতারাম দাস :-
১০০৪ মল্লাব্দ অর্থাৎ ১৬৯৮-৯৯ খ্রীঃ অব্দে সীতারাম দাস ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। তাঁর অষ্টাদশ শতকের অনেকগুলি খণ্ডিত পুঁথি পাওয়া গেছে। তাতে কবির আত্মকাহিনীটুকু কিঞ্চিৎ বৈচিত্র্যমণ্ডিত হয়েছে। বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস গ্রামে মাতুলালয়ে কবির জন্ম—এই গ্রামে ধর্মঠাকুরের মন্দির আজও প্রসিদ্ধ। সুখসাগর গ্রামে তার নিজবাড়ি, পিতার নাম দেবীদাস, মাতার নাম কেশবতী। কবি প্রথমে ডোমের ঠাকুর ধর্মের পূজা করতে ও নাম প্রচার করতে কিছু সংকুচিত হয়েছিলেন। কারণ তখন উচ্চবর্ণের সমাজে ধর্মের ততটা প্রচার ছিল না। কিন্তু স্বপ্নে ধর্মের প্রত্যাদেশ পেয়ে কবি সাহস করে ধর্মের মহিমাবিষয়ক কাব্য লিখলেন। এই কাব্যটি সমাপ্ত করতে কবির মোট চল্লিশ দিন লেগেছিল। কবির আত্মকাহিনীটি বেশ বাস্তব বলে মনে হয়।
কাব্যারম্ভে কবি মাঝে মাঝে ময়ূরভট্টের নাম করেছেন। তার মতে ময়ূরভট্ট প্রকৃতই ধর্মমঙ্গল লিখেছিলেন, কিন্তু কালক্রমে সেই কাব্যের কিছু কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা কবির এ মন্তব্য প্রমাণাভাবে মেনে নিতে অপারগ। বোধ হয় তিনি জনশ্রুতিতে ময়ূরভট্টের নাম শুনেছিলেন, তাই রচনার মধ্যে পূর্বসূরীর দোহাই দিয়েছেন। তাঁর কাব্যের কাহিনী পরিচ্ছন্ন ও বিবৃতিমূলক, চরিত্রে বিশেষ কোনো নূতনত্ব নেই। তাঁর অধিকাংশ পুঁথি কয়েকটি পালার সমষ্টিমাত্র– তাও আবার অর্ধশিক্ষিত ডোমপণ্ডিতের নকল। ফলে পুঁথিগুলি নানা ভুলভ্রান্তিতে পূর্ণ। যাই হোক, তার ধর্মমঙ্গল কাব্য শুধু এই শ্রেণীর কাব্যের আর একখানির সংখ্যাবৃদ্ধি করেছে মাত্র–এর বেশি এর আর কোনো গৌরব প্রাপ্য নয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন