পান্তাবুড়ির কথা
এক যে ছিল পান্তাবুড়ি, সে পান্তাভাত খেতে বড্ড ভালোবাসত। এক চোর এসে রোজ পান্তাবুড়ির পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই বুড়ি লাঠি ভর দিয়ে রাজার কাছে নালিশ করতে চলল।
পান্তাবুড়ি পুকুরধার দিয়ে যাচ্ছিল। একটা শিঙিমাছ তাকে দেখতে পেয়ে বললে, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’
পান্তাবুড়ি বললে, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি!’
![]() |
পান্তা-বুড়ি চলেছে |
শিঙিমাছ বললে, 'ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেও, তোমার ভালো হবে।'
পান্তা-বুড়ি বললে, 'আচ্ছা।'
তারপর পাস্তাবুড়ি বেলতলা দিয়ে যাচ্ছে। একটা বেল মাটিতে পড়ে ছিল, সে বললে, ‘পাস্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?”
পাস্তাবুড়ি বললে, ‘চোরে আমার পাস্তাভাত খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি।'
বেল বললে, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেও, তোমার ভালো হবে।'
পাস্তাবুড়ি বললে, 'আচ্ছা।” তারপর পাস্তাবুড়ি পথের ধারে খানিকটা গোবর দেখতে পেলে।
গোবর বললে, ‘পাস্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’
পাস্তাবুড়ি বললে, ‘চোরে আমার পাস্তাভাত খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি।'
গোবর বললে, “ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেও, তোমার ভালো হবে।'
পান্তাবুড়ি বললে, 'আচ্ছা।'
তারপর খানিক দূর গিয়ে পাস্তাবুড়ি দেখলে, পথের ধারে একখানা ক্ষুর পড়ে রয়েছে।
ক্ষুর বললে, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?”
পান্তাবুড়ি বললে, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি।'
ক্ষুর বললে, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে সঙ্গে নিও, তোমার ভালো হবে।”
পাস্তাবুড়ি বললে, 'আচ্ছা।’
তারপর পান্তাবুড়ি রাজার বাড়ি গিয়ে দেখলে, রাজামশাই বাড়ি নেই। কাজেই সে আর নালিশ করতে পেল না।
বাড়ি ফিরবার সময় তার ক্ষুর আর গোবর আর বেল আর শিঙিমাছের কথা মনে হল। সে তাদের সকলকে তার থলেয় করে নিয়ে এল।
পাস্তাবুড়ি যখন বাড়ির আঙিনায় এসেছে, তখন ক্ষুর তাকে বললে,-‘আমাকে ঘাসের উপর রেখে দাও।' তাই বুড়ি ক্ষুরখানাকে ঘাসের উপর রেখে দিল।
তারপর যখন সে ঘরে উঠতে যাচ্ছে, তখন গোবর বললে, “আমাকে পিঁড়ির উপর রেখে দাও।' তাই বুড়ি গোবরটাকে পিঁড়ির উপর রেখে দিলে।
বুড়ি যখন ঘরে ঢুকল, তখন বেল বললে, 'আমাকে উনুনের ভিতরে রাখ।” শুনে বুড়ি তাই করলে।
শেষে শিঙিমাছ বললে, 'আমাকে তোমার পাস্তাভাতের ভিতরে রাখ।’ বুড়িও তাই করল।
তারপর রাত হলে বুড়ি রান্না-খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে রইল। ঢের রাত্রে চোর এসেছে। সে তো আর জানে না, সেদিন বুড়ি কি ফন্দি করেছে। সে এসেই পান্তাভাতের হাঁড়িতে হাত ঢুকিয়ে দিল। সেখানে ছিল শিঙিমাছ। সে চোরবাছাকে এমনি কঁাটা ফুটিয়ে দিল যে, তার দুই চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল।
শিঙিমাছের খোঁচা খেয়ে চোর কাঁদতে কাঁদতে উনুনের কাছে গেল। তার ভিতরে ছিল বেল। চোর যেই আঙুলে তাত দেবার জন্য উনুনে হাত ঢুকিয়েছে, অমনি পটাশ করে বেল ফেটে, তার চোখেমুখে ভয়ানক লাগল।
তখন সে ব্যথা আর ভয়ে পাগলের মতো হয়ে, যেই ঘর থেকে ছুটে বেরুবে, অমনি সেই গোবরে তার পা পড়েছে। তাতে সে পা হড়কে ধপাস্ করে সেই গোবরের উপরেই বসে পড়ল।
তারপর গোবর লেগে ভূত হয়ে বেটা গিয়েছে ঘাসে পা মুছতে। সেইখানে ছিল ক্ষুর, তাতে ভয়ানক কেটে গেল। তাতে আর ‘ও মা গো! গেলুম গো!’ বলে না চেঁচিয়ে বাছা যান কোথায়?
তা শুনে পাড়ার লোক ছুটে এসে বললে, “এই বেটা চোর! ধর বেটাকে! মার বেটাকে। কান ছিঁড়ে ফেল!’
তখন যে চোরের সাজাটা হল! .
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন